Friday, February 7, 2014

" শুরুর হতাশা কাটিয়ে ই-কমার্সে প্রথম কাতারে আমার গ্যাজেট "

সবেমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়েছেন সাইফুল ইসলাম। তবে এরই মধ্যে উদ্যোক্তা হিসাবে বেশ সুনাম কামিয়েছেন ই-কমার্স সেবায়। অনলাইনে ফেরি করছেন গ্যাজেট। অথচ এ উদ্যোমী তরুনের শুরুটা ছিল হতাশার। জানাচ্ছেন তুহিন মাহমুদ
ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সম্প্রতি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে বিএসসি শেষ করেছেন সাইফুল। পড়ালেখার পাশাপাশি এতদিন AmarGadget.com নিয়ে কাজ করেছেন। এখন এ উদ্যোগকে নিজের পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছেন। দেশজুড়ে ছড়িয়ে দিতে চান তার গ্যাজেট সেবা কার্যক্রম।
আমার গ্যাজেটের নেপথ্যে
অন্য সকল উদ্যোক্তার মতো ছোটবেলা থেকে সাইফুলও ভাবতেন স্বাধীনভাবে কিছু করার। চাকুরির পরিবর্তে নিজের মতো করে কিছুর স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে উঠেছেন। ভাবতেন ব্যবসার মাধ্যমে মানুষকে বেশি সেবা দেওয়া যাবে। তাই পড়ালেখার পাশাপাশি নিজের ক্যারিয়ার গড়তে ব্যবসাকে সহজ মনে করে এগুতে শুরু করেন তিনি।

Amargadget-saiful islam-TechShohor
শুরুর কথা
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় থেকে ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে ভাবতেন সাইফুল। পড়াশোনার অবসরে ব্লগ পড়ে সময় কাটাতেন। একদিন সামহোয়্যার ইন ব্লগে বিডিওএসএনের সাধারণ সম্পাদক মুনীর হাসানের একটি লেখা পড়ে ‘চাকরি খুঁজব না চাকরি দেব’ গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হন। এতে উদ্যোক্তা সম্পর্কিত অনেক পোস্ট, আইডিয়া ও মতামত দেখতে থাকেন। ওই গ্রুপের একটি কর্মশালায় অংশ নিয়ে অনুপ্রাণিত হন। কর্মশালার দিনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন গ্যাজেট বিক্রির এ উদ্যোগ শুরুর।

বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজীব নামের একজনের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা ধার নিয়ে AmarGadget.com নামে ফেইসবুক পেইজ খুলে শুরু করেন সাইফুল। পরিকল্পনা করেন মূলত ইউনিক গ্যাজেট ও গিফট হোম ডেলিভারিসহ বিক্রি করার।
প্রথম দিকে ছিল হতাশা
শুরুতে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসের অভাব ছিল সাইফুলের বড় প্রতিবন্ধকতা। ই-কমার্সের পরিসর কম হওয়ায় প্রথম দিকে সাড়া ছিল যেমন কম, তেমনি পণ্য ডেলিভারি নিয়েও ঝামেলা ছিল। পরে একটি কুরিয়ার সার্ভিসের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে ডেলিভারির বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি।

amargadget-TechShohor
তরুন এ উদ্যোক্তা বলেন, পণ্য সংগ্রহে প্রথম দিকে বড় ব্যবসায়ীরা পাত্তা দিতেন না। অনেক সময় এত কম পণ্য বিক্রি করা হয় না বলে শো রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিতও দিয়েছেন কেউ কেউ। তবে এতে হতাশ না হয়ে পরিশ্রম ও অনলাইনে প্রচারণায় আস্তে আস্তে সাড়া পেতে থাকেন।
এরপর আর পিছন ফিরে তাকানো নয়। অন্য বিক্রেতারাও পণ্য বিক্রির জন্য যোগাযোগ করতে থাকেন। এমন দেখা গেছে অনেক বিক্রেতা যা ২ বছর ধরে বিক্রি করতে পারেননি, তা আমার গ্যাজেটে বিক্রি শুরুর পর থেকে তাদের স্টক খালি হয়ে যায়। এক সময় কিছু আমদানীকারক তাদের পণ্য মার্কেটিং ও বিক্রিরও প্রস্তাব দিয়েছেন।
যেভাবে এগিয়ে চলা
দেশে ই-কমার্স এখনও সেভাবে পরিচিতি পায়নি। অনলাইনে কেনাকাটা এখনও সাবলীল হয়নি। কার্ডে কেনাকাটার ক্ষেত্রেও খুব ভালো নিরাপত্তা নেই জানিয়ে সাইফুল বলেন, কুরিয়ার সার্ভিসগুলোর সেবার মানও খুব উন্নত নয়। এসব সমস্যার মধ্যেও সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। ক্রেতাদের ভালো মানের পণ্য, গ্রাহক সেবা দেওয়ার মাধ্যমে সন্তুষ্ঠি অর্জনের চেষ্টা তার।

Amargadget at uddokta hat-TechShohor
বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে আমার গ্যাজেটের টিম মেম্বার ৩ জন। একটি ওয়্যারহাউজ আছে, যেখানে পণ্য প্রদর্শনীর ব্যবস্থাও আছে। শিগগির নতুন ওয়েবসাইট চালু করার কথা জানান সাইফুল। ভালো সেবা দেওয়ায় পুরাতন ক্রেতাদের বেশিরভাগ নতুন পণ্য কিনতে আমার গ্যাজেটে আবার আসেন বলে তিনি জানান।

প্রচারণায় অনলাইনকে প্রাধান্য
ই-কমার্স সাইট হওয়ায় আমার গ্যাজেটের মূল প্রচারণা চলে অনলাইনে। বিভিন্ন ইভেন্টেও অংশ নেন তারা। কিছু দিন আগে উদ্যোক্তা হাটে অংশ নিয়ে ভালো সাড়া পেয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ইভেন্টে পৃষ্ঠপোষকতাও করে প্রতিষ্ঠানটি। এভাবেই একটি বড় গ্রাহক শ্রেণী তৈরি হয়েছে বলে জানান সাইফুল।

আগামীর পরিকল্পনা
নতুন ওয়েবসাইটে গ্রাহকদের জন্য আরও অনেক সুযোগ সুবিধা থাকবে। বাড়ানো হবে পণ্যের সংখ্যা, থাকবে আরও বেশি গিফট এবং প্রাইজ। বর্তমানে প্রতি মাসে একজনকে কাস্টমার অব দ্যা মান্থ এবং ফ্যান অব দ্যা মান্থ হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়। এটা আরও বাড়ানোর ইচ্ছার কথা জানান জানান সাইফুল। দেশব্যাপী আমার গ্যাজেটের সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে উল্লেখ করে তিনি এটিকে এশিয়ার প্রথম সারির ই-কমার্স সাইটে পরিণত করতে চান।

এটি শুধু স্বপ্ন নয় বলে মনে করেন তরুন এ উদ্যোক্তা। তার মতে হাতে ভালো বাজেট থাকলে এটা খুব কঠিন কিছু নয়। কেননা দেশের বাজার এখন বাড়ছে।
নতুনদের জন্য পরামর্শ
নিজের পছন্দকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন সাইফুল। তার মতে যে বিষয়টি নিয়ে আপনি ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিতে পারবেন সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে। আপনি কি করতে চান সে বিষয়েও ধারণা থাকা উচিত। আর ধৈর্য্য থাকতে হবে- নইলে ব্যবসায় টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে যাবে।

সাইফুল বলেন, একই সঙ্গে ক্রেতাদের মানসিকতা বুঝতে হবে। ফোকাস যত ছোট হবে, তত তাড়াতাড়ি পরিচিতি পেয়ে যাবেন। আর সবচেয়ে বড় কথা নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। হাল ছাড়লে চলবে না।

Source : http://techshohor.com/business/5381

No comments:

Post a Comment