ফেইসবুক ব্যবহার করে উদ্যোক্তায় পরিণত হওয়ার আরেক উদাহরণ আপনপ্লাস। জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যমটির ফ্যান পেইজ দিয়ে শুরু ই-কমার্স বাণিজ্য। আর এখন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বেশ সফলভাবে সেবা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। জানাচ্ছেন তুহিন মাহমুদ
ঢাকায় ই-কমার্স বাণিজ্য প্রসারের পেছনে রয়েছে কিছু উদ্যোমী এবং চ্যালেঞ্জ প্রিয় কিছু তরুণের অবদান। তেমনি এক উদ্যোগের সফল প্রয়াস আপনপ্লাস। তরুণ উদ্যোক্তা ওমর ফারুকের নিরলস প্রচেষ্টায় জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেছে অনলাইনে ক্রেতাবেচার এ হাটটি। পুরোপুরি অনলাইনভিত্তিক উদ্যোগ আপনপ্লাস পণ্য বিক্রির পাশাপাশি রাজধানীতে তা বিনামূল্যে সরবরাহও করছে।

আপনপ্লাসডটকমে রয়েছে বিভিন্ন গিফট আইটেম, ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেট, হেলথ ও বিউটি অ্যাক্সেসরিজ, ফ্যাশন পণ্য, পোশাক, ঘর-গৃহস্থলির পণ্য।
শুরুর গল্প
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজিতে হোটেল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ট্যুরিজম নিয়ে পড়াশোনা করছেন ওমর ফারুক। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের ব্যয় মেটাতে কিছু উপাজর্নের চেষ্টা করছিলেন। কয়েক জায়গায় পার্ট-টাইম চাকরির জন্য ধর্ণাও দেন। তবে আশানুরুপ কোনো চাকরি মেলেনি।
পড়াশোনা ও চাকরি খোঁজার মধ্য দিয়ে দিন কাটছিল ওমর ফারুকের। এরই মাঝে অলস এক দুপুরে ফেইসবুকভিত্তিক গ্রুপ ‘চাকরি খুঁজব না চাকরি দেব’-তে অনেক উদ্যাগের গল্প পড়ে নিজে থেকে কিছু করার আইডিয়া মাথায় ঢুকে গেল। সঙ্গে যোগ হয় পছন্দমত চাকরি না পাওয়ার হতাশা। এভাবেই শুরু হলো এখন বেশ জনপ্রিয়তা পাওয়া ই-কমার্স সাইট আপনপ্লাসডটকমের।
অনুপ্রেরণা
ফেইসবুকের কল্যাণে বেশ আগে থেকে যুক্ত ছিলেন ‘চাকরি খুঁজব না চাকরি দেব’ গ্রুপের সঙ্গে। নতুন কিছু করার উৎসাহ পেলেন সেখান থেকে। আস্তে আস্তে পরিকল্পনা সাজাতে থাকেন নতুন কিছু করার। একদিন অনেকটা হঠাৎ করেই ফেইসবুকে ফ্যাশন দুনিয়া (https://www.facebook.com/Fashion.Duniya) নামে একটি ফ্যান পেইজ খোলেন ওমর ফারুক। পরীক্ষামূলকভাবে তা চালুর সঙ্গে সঙ্গে কিছু টাকা সংগ্রহ করে ব্যতিক্রমী, অভিনব, ফ্যাশেনেবল এবং ভাল মানের পণ্য সংগ্রহ করলেন।

এগিয়ে চলা
ফ্যান পেইজের মাধ্যমে বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগের সঙ্গে চলতে থাকে পণ্যের প্রচারণা। প্রথম দিকে বেশ কিছুদিন সাড়া না পেলেও থেমে থাকেনি ওমর ফারুকের প্রচারণা। আস্তে আস্তে সাড়া পেতে থাকলেন তিনি। দেখা গেল, বেশ কিছুদিনের মধ্যে পণ্যগুলো বিক্রি হয়ে গেল। মনের মধ্যে অন্য রকম একটা আনন্দ ও সাহস পেলেন তিনি। এরপর আরও পণ্য সংগ্রহ করতে লাগলেন। শুরু হলো এক সফল উদ্যোগের পথচলা।
কাজ করতে গিয়ে দেখলেন ভালোভাবে ব্যবসায় টিকে থাকতে হলে অনেক সময় ও বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়। পড়াশোনার পাশাপাশি তার একার পক্ষে এটি ভালোভাবে টিকিয়ে রাখা মুশকিল। মূলধনও একটি বড় বিষয়। যা তার একার পক্ষে পুরোপুরি সম্ভব নয়। তাই রাহাত হোসেন নামে এক বড় ভাইকে প্রস্তাব দিলেন একসঙ্গে কাজ করার। সানন্দে রাজিও হলেন তিনি। এভাবে শুরু হলো দুই তরুণ উদ্যোক্তার পথচলা।
প্রধান প্রতিবন্ধকতা : যথাসময়ে পণ্য ডেলিভারি
দেশীয় প্রেক্ষাপটে অনলাইন কেনাকাটার এ ব্যবসা চালাতে গিয়ে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়েছে আপনপ্লাসের উদ্যোক্তাদের। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, সময় মতো পণ্য ডেলিভারি দেওয়া। দেখা যায়, সঠিক সময়ে পণ্যটি ডেলিভারি ম্যানের কাছে দিয়ে আসলেও তিনি গ্রাহকের কাছে তা পৌঁছে দিতে দেরি করছেন। বিশেষ করে ঢাকার বাইরের অর্ডারগুলোর ক্ষেত্রে এমনটা হয়। আর একারণে অনেকে গ্রাহক অসন্তুষ্ট হন।
নিজেদের একটা ওয়েবসাইট
প্রথম থেকে গ্রাহকদের চাহিদাকে বেশি প্রাধান্য দিতেন ফারুক ও রাহাত। তারা বোঝার চেষ্টা করতেন, গ্রাহকদের চাহিদা- কোন ধরণের পণ্য তারা বেশি পছন্দ করে। গ্রাহকদের চাহিদার উপর ভিত্তি করে পণ্য সংগ্রহ করতেন তারা। পুরোপুরি ই-কমার্স বাণিজ্য চালু করতে ফেইসবুক ফ্যান পেইজের সঙ্গে একটা ওয়েবসাইটও চালু করেন তারা। এখন ফ্যান পেইজ ও ওয়েবসাইট দুটির মাধ্যমে গ্রাহক সেবা দিচ্ছেন তারা।

রাজধানীতে বিনামূল্যে পণ্য ডেলিভারি
রাজধানী ঢাকার মধ্যে কেউ পণ্য কিনতে চাইলে তা পৌঁছে দেওয়ার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিচ্ছে আপনপ্লাস। বিনামূল্যে গ্রাহকদের দোরগোড়ায় পণ্য সরবরাহ করছে তারা। গ্রাহক সন্তুষ্টি আদায়ে একই সঙ্গে নিয়মিত বিভিন্ন সময় সারপ্রাইজ গিফটও পাঠানো হয়।
প্রচারণা
প্রচারণার জন্য ভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন ফারুক ও রাহাত। গতানুগতিক বিজ্ঞাপনের বাইরে ফেইসবুককেন্দ্রিক প্রচারণার দিকে ঝোঁক তাদের। এ ছাড়া পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমেও নিজেদের প্রচার করছেন তারা। কিছুদিন আগে ‘চাকরি খুঁজব না চাকরি দেব’ গ্রুপ আয়োজিত ‘উদ্যোক্তা হাট’ মেলায় সিলভার স্পন্সর ছিল আপনপ্লাস। এ ছাড়া‘মুভি লাভারজ্’ নামে একটি ফেইসবুক গ্রুপের টেকনিক্যাল পার্টনার ও স্পন্সর হিসাবে কাজ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

নিজস্ব শোরুমের স্বপ্ন
শুধু ফেইসবুক কিংবা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ব্যবসায়িক কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে চায় না ফারুক ও রাহাত। অনলাইনের বাইরেও একটি স্থায়ী ঠিকানা গড়তে চান তারা। আগামীতে একটি শোরুম দেওয়ার স্বপ্ন তাদের। দুই তরুণ উদ্যোক্তা গ্রাহকদের চাহিদা অনুসারে ইউনিক পণ্যের সম্ভারে পরিণত করতে চান আপনপ্লাসকে।
নতুনদের জন্য পরামর্শ
ই-কমার্স ব্যবসায় নামার আগে গ্রাহকদের চাহিদা বোঝার চেষ্টা করতে হবে। যারা এই ব্যবসায় দীর্ঘদিন ধরে আছে তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সম্ভব হলে তাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে প্রয়োজনীয় তথ্য, বাজার পরিস্থিতিসহ বিস্তারিত জেনে নিতে হবে। প্রচণ্ড পরিমানে মার্কেট রিসার্চ করতে হবে ও সামাজিক যোগাযোগ সাইটে সক্রিয় থাকতে হবে।
যোগাযোগ
আপনপ্লাস
ফেসবুক পেজ : https://www.facebook.com/AponPlus
ওয়েবসাইট : http://www.aponplus.com
Source : http://techshohor.com/business/5937
No comments:
Post a Comment