
অনিমা রায়। একজন সফল নারী উদ্যোক্তার নাম। ছোটবেলায় তার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে একজন সেরা ডিজাইনার হবেন। আজ তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। দেশের গ-ি পেরিয়ে বিদেশেও বিক্রি হচ্ছে তার তৈরি ডিজাইনের পোশাক। ২ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে পোশাক শিল্পের কাজ শুরু করলেও বর্তমানে প্রতি মাসে তার ব্যয় প্রায় আড়াই লাখ টাকা। আর ব্যবসার লাভের অংশ দিয়েই চলে এই খরচ। একই সঙ্গে সংসারের খরচ আর ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করছেন।
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার জবারপাড় গ্রামের মেয়ে অনিমা। নবম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় একই গ্রামের রঞ্জন পা-ের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পরপরই স্বামীর সঙ্গে চলে আসতে হয় ঢাকার মিরপুরে। স্বামীর ইচ্ছায় মিরপুর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। পরবর্তী সময়ে উত্তরার দক্ষিণখানে স্থানান্তর হলে এক কলেজে ভর্তি হলেও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা আর দেয়া হয়নি। এর মধ্যে অনিমা আর রঞ্জনের সংসারে আসে তাদের প্রথম সন্তান সৈকত পা-ে। ফলে সংসার আর সন্তান নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েন অনিমা। কিন্তু দিন দিন এই একগুঁয়েমি ব্যস্ততা তার আর ভালো লাগে না। পরে স্বামীর সঙ্গে বোঝাপড়া করে ছোটবেলার সেই স্বপ্ন পূরণের পথে যাত্রা করেন।
ব্যবসার শুরু যেভাবে : ১৯৯৮ সালে বাড্ডা বহুমুখী সমবায় সমিতির কাছ থেকে মাত্র ২ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে তিনি এ ব্যবসা শুরু করেন। অর্থাৎ ১৬ বছর ধরে তিনি এ ব্যবসাকে আঁকড়ে ধরে আছেন। তিনি বলেন, প্রথম অবস্থায় আমি আমার কিছু ডিজাইন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে দেখাই। ব্যক্তিগত পর্যায়ে কেউ কেউ আমার সঙ্গে দেখা করে। ফলে অল্প টাকা দিয়ে ব্যবসাটা শুরু করতে পেরেছিলাম। এরপর প্রথম দফায় ব্র্যাক থেকে ৫০ হাজার ও দ্বিতীয় দফায় ১ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ব্যবসার পরিসর বৃদ্ধি করি। সেলাই মেশিন ও এমব্রয়ডারি মেশিন ক্রয় করি। আর কারখানার জন্য টুকিটাকি যা যা দরকার তা ক্রয় করে ব্যবসা পুরোদমে শুরু করি। আর এ ব্যবসার খরচ দিয়েই ব্র্যাকের ঋণ শোধ করি। এর পর পরিসর আরও বৃদ্ধি করার জন্য ২০০৩ সালে এসএমই ফাউন্ডেশনে যুক্ত হই। এরপর জনতা ব্যাংক থেকে প্রথম দফায় ৫ লাখ ও দ্বিতীয় দফায় মার্কেন্টাইল ব্যাংক থেকে ৮ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করি। আর সে অর্থ দিয়ে চলছে বর্তমান ব্যবসা।
উৎপাদনের জন্য যেসব উপকরণ প্রয়োজন : অনিমা রায় জানান, কেউ স্বল্প পুঁজিতে পোশাক শিল্পের ব্যবসা শুরু করতে চাইলে প্রথম অবস্থায় একটি সেলাই মেশিন ও একটি এমব্রয়ডারি মেশিন প্রয়োজন। এ ছাড়া উৎপাদনের পরিমাণ অনুযায়ী কাপড়, রঙ, বুটিকসের প্রয়োজনীয় উপকরণ ক্রয় করতে হবে। যদি কেউ প্রথমেই বড় পরিসরে কাজ করতে চান, তাহলে ন্যূনতম দেড় থেকে ২ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে। আর এ কাজের জন্য ন্যূনতম ১০ থেকে ১৫ জন শ্রমিক প্রয়োজন।
ব্যবসার জন্য স্থায়ী খরচ ও চলতি খরচ : বর্তমানে অনিমা রায়ের পোশাক কারখানায় ১২ শ্রমিক কাজ করছেন। তাদের মাসিক বেতন ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। কারখানা ও বাসা ভাড়া বাবদ খরচ যায় ৪০ হাজার টাকা। প্রতি মাসে কাপড় ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক জিনিস কেনাসহ খরচ হয় ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। একই সঙ্গে ব্যাংক লোনের টাকা পরিশোধ
করা হয় ব্যবসার লাভ্যাংশ থেকে। অনিমা রায় জানান, দেশের বিভিন্ন জেলায় আমার তৈরি ডিজাইনের পোশাক বিক্রি হয়। আর
আমেরিকা, লন্ডন, সিঙ্গাপুরেও পোশাক বিক্রি করা হয়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমাকে অর্ডার দিলে আমি অর্ডারি পোশাক তৈরি করি। অনিমা রায় জানান, বর্তমানে তার এ পোশাক শিল্পের ব্যবসা দেখা একার পক্ষে সম্ভব নয় বলেই স্বামী রঞ্জন পা-ে চাকরি ছেড়ে ব্যবসায় মন দিয়েছেন। স্ত্রীর কাজে সহায়তা করতে তাকে এখন দিনরাত খাটতে হচ্ছে।
No comments:
Post a Comment