Friday, February 7, 2014

" ই-কমার্সে স্বপ্ন সাজাচ্ছে আপনজোন ডটকম "

তুহিন মাহমুদ, টেক শহর প্রতিবেদক : দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তাদের সাফল্যের কথা তুলে আনতে চায় টেক শহর ডটকম। ই-বাণিজ্য, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান, টেলিকম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান তথা তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক যে কোনো উদ্যোগ ও উদ্যোক্তাদের নিয়মিত সবার সামনে তুলে ধরতেই এ উদ্যোগ। সফলদের সাফল্য গাঁথার পেছনের কাহিনী ছড়িয়ে দিতে টেকশহর ডটকমের এ আয়োজনে এবার থাকছে আপনজোন ডটকমের বেড়ে ওঠার গল্প।
সবেমাত্র এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। ছুটির এ সময়টাতে সমবয়সীরা যখন এটা ওটা নিয়ে ব্যস্ত তখন তিনি বিভোর ইন্টারনেট জগতে। বিশাল এ ভুবনের নিয়মিত বাসিন্দা হয়ে পড়েন তিনি। দেশ বিদেশের নানা সাইট ঘাঁটাঘাঁটির সময় অ্যামাজন, ই-বেসহ আরও কয়েকটি সাইটের কার্যক্রম দেখে মুগ্ধ হয়ে পড়েন। মাথায় ঢুকে যায় ই-কমার্সের পোকা।
শুরুর গল্পটা এমনই ছিল বলে জানালেন আপনজোন ডটকমের (http:/ /aponzone.com) উদ্যোক্তা ও প্রধান নির্বাহী আসিফ আহনাফ। ১৯ বছর বয়সী এ তরুণ বলেন, এসএসসি পরীক্ষার পর ছুটির সময়টাতে বিশ্বজুড়ে অনলাইনে কেনাবেচার জমজমাট ভুবনের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সময়টাতেই দেশে এ রকম কিছু করার পরিকল্পনা প্রায় ঠিক করে ফেলি। ওই সময়টাতে খুবই অবাক হয়েছিলাম অনলাইনের মাধ্যমে সব কিছু কেনাবেচা সম্ভব দেখে। এ ধরনের ব্যবসা সম্পর্কে জানা শোনা বলতে ইন্টারনেটের তথ্যই ভরসা। পুঁজিও নেই। এরপরও কিছু একটা করার নেশা থেকেই যেন পথে নেমে পড়ি।
দেশের ই-বাণিজ্যে আপনজোন ডটকম ক্রমে পরিচিতি পাচ্ছে জানিয়ে আসিফ বলেন, অথচ শুরুটা ছিল একেবারেই সাদামাটা। গল্পটা অনেকেই বিশ্বাস করতে চান না। তিনি বলেন, অনলাইনে বেচাকেনার স্বপ্ন দেখতে দেখতেই পরীক্ষার রেজাল্ট হয়ে গেল। ভর্তি হলাম ঢাকা কলেজে। কলেজের পড়াশোনার ফাঁকেই সেই ইচ্ছাটা আবার জাগতে শুরু করল। আমিও হাল না ছেড়ে তা বাস্তবায়নের পথ খুঁজতে শুরু করলাম। হাতে পুঁজি না থাকায় এলিফ্যান্ট রোডের পরিচিত এক দোকান থেকে ওয়াইম্যাক্স মডেম ও কিছু কম্পিউটার সামগ্রী বাকিতে নিয়ে যাত্রাবাড়ি এলাকায় আমার ইংলিশ শিক্ষক মোহাম্মদ তারেকের বাসা থেকে বিক্রি শুরু করলাম।
এ প্রতিবেদককে মনোযাগী শ্রোতা পেয়ে পুরনো স্মৃতি তুরে আনতে শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছু তরুণ আসিফ। তার স্বপ্ন যাত্রার কথা বলতে থাকেন। তিনি জানান, যাত্রাবাড়িতে ডোর টু ডোর সেবা দেওয়া শুরুর তিন মাসের মাথায় ২০ হাজার টাকা মুনাফাও করে ফেললাম। এরপর আমাদের সঙ্গে যোগ দিলেন নাহিদুর রব জিকো। ফ্রেঞ্জ এশিয়া নামে কম্পিউটার সামগ্রী বিক্রি ও কম্পিউটার ট্রেনিং সেবা দিতে একটি শোরুম খুললাম আমরা। তিন জনের বিনিয়োগ দাঁড়াল দুই লাখ টাকা। এরই মাঝে স্বয়ংসম্পূর্ণ ই-কমার্স সাইট দাঁড় করানোর অভিজ্ঞতা লাভে প্রতিষ্ঠিত ১০টি ক্লাসিফাইড ও ই-কমার্স সাইটগুলোতে বিভিন্ন পণ্য সরবরাহ শুরু করলাম। পাশাপাশি বাজার বিশ্লেষণের কাজও চালিয়ে যাই। কিভাবে যে দু’বছর কেটে গেল টেরই পেলাম না। উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করলাম ২০১২ সালে। এবার লেগে গেলাম পরিপূর্ণ ই-কমার্স সাইট চালু করতে। আপনজোন ডটকমের যাত্রা শুরু এভাবেই।
Aponzone dotcom Cover Photo_Tech Shohor

টার্নিং পয়েন্ট কিউবি ল্যাপটপ ফেয়ার
সীমিত আকারে ২০১২  সালের শেষের দিকে শুরু হয় আপনজোনের ই-কমার্স কার্যক্রম। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে সবার কাছে আত্মপ্রকাশ মূলত চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার একটি ল্যাপটপ মেলায়।  আসিফ বলেন, আমাদের আরও উদ্দমী হতে সাহায্য করেছে মেকার কমিউনিকেশন আয়োজিত কিউবি ল্যাপটপ ফেয়ার। প্রায় বিনামূল্যে ১২৮ বর্স্কফুটের বিশাল স্টলসহ মেলায় অংশ নেওয়ার সুযোগ এসেছিল মেকারের সৌজন্যে। এ মেলাতেই তিনশ’র বেশি গ্রাহক পেয়েছিল আপনজোন। এটি ছিল আমাদের ব্যবসায়ের মূল টার্নিং পয়েন্ট।
বাধা পেরিয়ে এগিয়ে চলা
একটি ই-কমার্স সাইট পরিচালনা করতে অনেক মূলধনের প্রয়োজন। এ নিয়ে আমাদেরও বিপাকে পড়তে হল। আপনজোন ডটকম পরিবারের প্রত্যয় ছিলো শূন্য থেকে বড় হওয়ার। একযোগে অনেক বিনিয়োগের সুযোগই ছিল না আমাদের। ফ্রেঞ্জ এশিয়া থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেওয়া হয়। যা মেলার মুনাফা ও পরবর্তী এক মাসের মুনাফা দিয়েই পরিশোধ করা হয়। আপনজোনের মূলধন দাঁড়ায় ৬০ হাজার টাকা। এভাবেই শুরু হয় আস্তে আস্তে এগিয়ে চলা। আসিফ আহনাফ বলেন, এগিয়ে চলার পথে কখনও যেমন সাফল্য এসেছে, তেমনি হতাশাও ভর করেছে।  এসব নিয়েই চলছে আপনজোনের পথ চলা।
asif_Ziko_ Tech Shohor
ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় সেরা প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত
ওয়েবসাইটের মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য আসিফ আহনাফ ও নাহিদুর রব জিকো ঘুরে বেড়িয়েছেন ঢাকা, কুমিল্লা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন নগরীতে। অংশগ্রহণ করেছেন বিভিন্ন মেলায়। চলতি বছরের জুলাইয়ে যখন নিজেদের উদ্যম ও উদ্ভাবনীর স্বীকৃতি হিসেবে পুরষ্কার পেয়ে নতুন করে উজ্জীবিত হলেন। প্রায়  ৬০টি প্রতিষ্ঠানকে পিছনে ফেলে তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রনালয় আয়োজিত ঢাকা ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় সেরা প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হয় আপনজোন ডটকম। আসিফ বলেন, এ প্রাপ্তি আমাদের আকাংখাকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
বৃহত্তম অনলাইন শপিং সাইট করার পরিকল্পনা
আগামীতে দেশে ই-বাণিজ্যই হবে ব্যবসার সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র এমনটিই মনে করেন আসিফ ও জিকো। তাই আপনজোনকে দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম অনলাইন শপিং সাইট করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। তাইতো এ স্বপ্ন পূরণে জিকো মাস্টার্স শেষ করেও চাকুরি না খুঁজে এটিকেই বড় করার কাজে লেগে পড়েছেন। একজন ক্রেতা তার চাহিদার সম্ভাব্য সবকিছুই যাতে তাদের কাছ থেকে পান সে চেষ্টাই চালাচ্ছেন তারা। পাশাপাশি এখন নজর দিচ্ছেন মানসম্মত পণ্য ও ক্রেতার মনোতুষ্টির দিকে।
আসিফ বলেন, নিজের ওপর বিশ্বাস রেখে এগিয়ে গেলে সাফল্য আসবেই। তিনি বলেন, ‍”একটি কথা বলতে চাই -স্বপ্ন সেটাকে বলে না যা আমরা ঘুমিয়ে দেখি, স্বপ্ন সেটাই যা আমরা জেগে থেকে দেখি।”
-টেক শহর

No comments:

Post a Comment