Friday, February 7, 2014

" ঘড়ি মেরামত করে সংসারে সচ্ছলতা এনেছে প্রতিবন্ধী জুয়েল রানা "

অন্যের দয়াদাক্ষিণ্য নয়, দারিদ্র্য জয় করতে নিজের প্রচেষ্টায় প্রতিবন্ধী জুয়েল রানা গড়ে তুলেছেন মেসার্স জুয়েল ওয়াচ। নিজের উপার্জন দিয়ে পরিবারের অভাব দূর করেছে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার রাখালিয়াচালার প্রতিবন্ধী জুয়েল রানা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৮৮ সালে কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক ইউনিয়নের রাখালিয়াচালা এলাকায় এক খ- জমি কিনে সেখানে বসবাস করে আসছিলেন দিনমজুর আবদুল জলিল। ১৯৯৩ সালে জলিলের পরিবারে জন্মগ্রহণ করে জুয়েল। দুর্ভাগ্যবশত জন্ম থেকেই তার দুটি পায়ে সমস্যা দেখা দেয়। ওই এলাকার জামিয়া কাদেরিয়া মাহামুদিয়া মাদরাসায় ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে সে। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে জুয়েল রানা সবার বড়। তাই বড় হলে পরিবারের সব দায়িত্ব পড়ে তার কাঁধে। অভাব-অনটন আর প্রতিবন্ধকতা হার মানাতে পারেনি প্রতিবন্ধী জুয়েলকে। মানুষের কাছে হাত না পেতে সংসার চালানোর জন্য সফিপুর বাজারে গড়ে তুলেছেন মেসার্স জুয়েল ওয়াচ। ঘড়ি বিক্রি করে সংসারের অভাব-অনটন অনেকটা দূর করেছে সে। এখন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি এখন জুয়েল।

এলাকাবাসী জানান, প্রতিবন্ধী হওয়ায় জীবনে চলার পথে বাধাগ্রস্ত হলেও থেমে থাকেনি জুয়েল। কখনও কারও কাছে সাহায্যের হাত বাড়ায়নি। বরং পরিবারের বড় ছেলে হওয়ায় সংসারের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছে সে। এ কারণে ২০০৩ সালে উপজেলার সফিপুর বাজারে মাহাবুব হাসানের ঘড়ি মেরামতের দোকানে বিনা বেতনে কাজ শেখে জুয়েল। সেখান থেকে অল্প সময়ে জুয়েল ঘড়ি মেরামতের ওপর দক্ষতা অর্জন করে। এরপর ২০০৬ সালে এক হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে সফিপুর বাজারে ছোট টং দোকান নিয়ে জুয়েল ঘড়ি মেরামত ও বিক্রির কাজ শুরু করে। ঘড়ি মেরামত ও বিক্রি করে সব খরচ বাদে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৩০ টাকা আয় করে। ওই আয়ের টাকা থেকে সংসারের সব খরচ, ছোট দুটি ভাইবোনের লেখাপড়ার খরচ বহন করছে জুয়েল। এছাড়া প্রতিবন্ধী ভাতা হিসেবে সরকার থেকে প্রতি মাসে ৩০০ টাকা পায়। প্রতিবন্ধী হলেও জুয়েল একজন সাধারণ মানুষের মতোই পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জুয়েল এখন আর বোঝা নয়, পরিবারের একমাত্র অবলম্বন।  সেই সঙ্গে দেশের ও পরিবারের জন্য গৌরবের।

জুয়েল রানা জানান, স্বাভাবিক মানুষের মতো আমার দুটি পা না থাকলেও আল্লাহ আমাকে দুটি স্বাভাবিক হাত দিয়েছেন। এই হাত দুটোকেই আমি কাজে লাগাতে চেষ্টা করলাম। তাই নিজের মনোবল ও ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে ঘড়ি মেরামতের কাজ শিখি। আর এ কাজ শিখে এক হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ঘড়ি মেরামত ও পাশাপাশি ঘড়ি  বিক্রি করি। এখান থেকে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে আমার ছোট বোন ও ছোট ভাইয়ের লেখাপড়ার খরচ এবং সংসারের যাবতীয় খরচ চালিয়ে  যাচ্ছি। 



No comments:

Post a Comment